এক নজরে ২০২০ : যাঁরা চলে গিয়েছেন চিরতরে

Advertisement
২০২০ সালে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিয়েছেন সমগ্র পৃথিবীর এক ঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁদের অনেকেই মারা গিয়েছেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে। আবার অনেকেই দীর্ঘদিন ভুগছিলেন বিভিন্ন অসুখে। এঁদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন একেবারেই নবাগত। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার উপযুক্ত সময়েই তাঁরা চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে। তবু মানুষ তাঁদের মনে রাখবে আজীবন। তাঁদের অমর সৃষ্টি থেকে যাবে সবার হৃদয়ে। – ছবি সংগৃহীত
এক নজরে ২০২০ : যাঁরা চলে গিয়েছেন চিরতরে

জনদর্পণ ডেস্ক : ২০২০ সালটা যে মোটেও ভালো যাবে না, তা অনেকেই বছর শুরুর প্রথম থেকেই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ এই বছরের একেবারে গোড়াতেই বিশ্ব জুড়ে ছড়াতে শুরু করেছিল মারণ ভাইরাস কোভিড ১৯। যার প্রভাব এখনও বর্তমান। গোটা বছর জুড়েই যেন এক প্রাণ সংশয়ে ভুগেছে সমগ্র পৃথিবী। আর বছরের একেবারে শেষ লগ্নে পৌঁছে এই মৃত্যুর মিছিল ছাড়িয়ে গিয়েছে প্রায় ১৮ লক্ষ।

তবে শুধু করোনা জনিত কারণে নয়, অন্যসব কারণেও এই বছর একে একে হারিয়ে গিয়েছেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের এক ঝাঁক জনপ্রিয় তারকা। তাঁদের অনেককেই যেতে হয়েছে খুব অল্প বয়সেও। একবার দেখে নেওয়া যাক সেইসব জনপ্রিয় তারকাদের।

তাপস পাল (২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৫৮ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০) : বাংলা সিনেমার অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি মুখ তিনি। ১৯৮০ সালে ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আগমন ঘটে তাঁর। ১৯৮১ সালে ‘সাহেব’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছেন ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কার। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিকবার বিভিন্ন বিতর্কেও জড়িয়েছেন।

পি কে ব্যানার্জী (২৩ জুন ১৯৩৬ – ২০ মার্চ ২০২০) : ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বা পি কে ব্যানার্জী ছিলেন ভারতীয় ফুটবল দলের একজন নির্ভরযোগ্য স্ট্রাইকার। ভারতের হয়ে তিনি ৪৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ১৪টি। ২০০৪ সালে তিনি ফিফার সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘অর্ডার অফ মেরিট’ পান।

কেন শিমুরা (২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ – ২৯ মার্চ ২০২০) : জাপানের বিখ্যাত এই কৌতুকাভিনেতা খুব কম বয়সেই অভিনয় জগতে পা রাখেন। বাংলাদেশের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ‘কাইশ্যা’ নামে তিনি পরিচিত। তিনি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বল্প দৈর্ঘ্যের কৌতুক ফুটেজে অভিনয় করেছেন। গত ২৩ মার্চ তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

ইরফান খান (৭ জানুয়ারি ১৯৬৭ – ২৯ এপ্রিল ২০২০) : বলিউড জগতে তিনি অতি পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি মুখ। বলিউডের পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি হলিউড ও তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ১৯৮৮ সালে ‘সালাম বম্বে’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বলিউডে তাঁর আগমন ঘটে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিউরো এন্ড্রোক্রিন ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

ঋষি কাপুর (৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ – ৩০ এপ্রিল ২০২০) : বলিউড জগতের জনপ্রিয় রোম্যান্টিক অভিনেতা ঋষি কাপুর অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। ১৯৭৩ সালে ‘ববি’ সিনেমার মধ্য দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি। মূলত নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করলেও জীবনের শেষ দিকে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে তিনি ভিলেন অভিনয়ও করেছেন। গত ৩০ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে।

চুনী গোস্বামী (১৫ জানুয়ারি ১৯৩৮ – ৩০ এপ্রিল ২০২০) : সুবিমল গোস্বামী বা চুনী গোস্বামীর জন্ম বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতীয় ফুটবল দলের একজন নিয়মিত সদস্য। ফুটবল মাঠে তাঁর পজিশন ছিল স্ট্রাইকার। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি মোহনবাগান দলের অধিনায়ক ছিলেন। ফুটবলের পাশাপাশি তিনি ক্রিকেটও খেলেছেন।

সুশান্ত সিং রাজপুত (২১ জানুয়ারি ১৯৮৬ – ১৪ জুন ২০২০) : ২০২০ সালে এই বলিউড অভিনেতার মৃত্যু ঘিরেই সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি হয়েছে। ২০১৩ সালে ‘কই পো ছে’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর বলিউড সিনেমায় আগমন ঘটে। মোট ৯টি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। ২০১৬ সালের ‘এম এস ধোনী : দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ও ২০১৯ সালের ‘ছিছোড়ে’ সিনেমা দুটি যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল। গত ১৪ জুন বান্দ্রার বাড়ি থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।

জগদীপ জাফরি (২৯ মার্চ ১৯৩৯ – ২ জুলাই ২০২০) : পুরো নাম সৈয়দ ঈশতিয়াক আহমেদ জাফরি। ১৯৫১ সালে ‘আফসানা’ সিনেমায় শিশু শিল্পীর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ ঘটে। তিনি ৪০০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

সরোজ খান (২২ নভেম্বর ১৯৪৮ – ৩ জুলাই ২০২০) : বলিউডের অন্যতম সেরা নৃত্য পরিচালক নির্মলা নাগপাল সবচেয়ে বেশি পরিচিত সরোজ খান নামে। চলচ্চিত্রে তাঁর প্রথম আগমন ‘নজরানা’ সিনেমায়। এই সিনেমায় কাজ করার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। তিনি ৪ হাজারেরও বেশি গানে নৃত্য পরিচালনা করেছেন।

এন্ড্রু কিশোর (৪ নভেম্বর ১৯৫৫ – ৬ জুলাই ২০২০) : বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই কণ্ঠশিল্পীর জন্ম রাজশাহী জেলায়। তিনি অসংখ্য সুপারহিট বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম ‘হায় রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’। ১৯৭৭ সালে সঙ্গীত জীবনে তাঁর আগমন ঘটে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমার নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি নন-হজকিন লিম্ফোমা ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

রঞ্জন ঘোষাল (৭ জুন ১৯৫৫ – ৯ জুলাই ২০২০) : প্রথম স্বাধীন বাংলা রক ব্যান্ড ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’-র প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম তিনি। ব্যান্ডটি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭৫ সালে কলকাতায়। সঙ্গীত সেবার পাশাপাশি তিনি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজকের ভূমিকায় কাজ করেছেন অসংখ্য বাংলা নাটকে।

চেতন চৌহান (২১ জুলাই ১৯৪৭ – ১৬ আগস্ট ২০২০) : তাঁর পুরো নাম চেতেন্দ্র প্রতাপ সিং চৌহান। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে তিনি ৪০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তিনি ছিলেন মূলত উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তাঁর মৃত্যু ঘটে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।

চাদউইক বসমান (২৯ নভেম্বর ১৯৭৬ – ২৮ আগস্ট ২০২০) : ১৫টি হলিউড সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ এবং ‘অ্যাভেঞ্জারস’ সিরিজের শেষ দুটি সিনেমার ব্ল্যাক প্যান্থার চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তাঁর মৃত্যু ঘটে কোলন ক্যান্সারের কারণে।

প্রণব মুখোপাধ্যায় (১১ ডিসেম্বর ১৯৩৫ – ৩১ আগস্ট ২০২০) : তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। তার পূর্বে তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য। প্রায় ৫০ বছর ভারতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিদেশ, অর্থ, রাজস্ব, প্রতিরক্ষা, পরিবহণ, যোগাযোগ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। গত ৯ আগস্ট বাড়ির শৌচাগারে পড়ে যান তিনি। ১০ আগস্ট দিল্লীর সেনা হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করানোর পর তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

এস পি বালা সুব্রামানিয়াম (৪ জুন ১৯৪৬ – ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০) : অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী ১৬টি ভাষায় ৪০ হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। পেয়েছেন একাধিক চলচ্চিত্র পুরস্কার। ভারত সরকার কর্তৃক ২০০১ সালে পদ্মশ্রী ও ২০১১ সালে পদ্মভূষণ পেয়েছেন তিনি। গত ৫ আগস্ট তাঁর কোভিড টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ আসে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৫ – ১৫ নভেম্বর ২০২০) : বাংলা সিনেমার এক অদ্বিতীয় নাম সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর প্রথম আগমন সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি ৩০০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র ‘ফেলুদা’। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় হয়ে রয়েছেন একজন সেরা আবৃত্তিকার হিসাবে। গত ৫ অক্টোবর তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরে ১৪ অক্টোবর অবশ্য তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায়।

ডিয়েগো মারাদোনা (৩০ অক্টোবর ১৯৬০ – ২৫ নভেম্বর ২০২০) : সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের অন্যতম এই আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার। খুব ছোটো থেকেই তাঁর ফুটবল প্রতিভার প্রকাশ পায়। ফুটবল সম্রাট পেলের সঙ্গে তাঁর তুলনা চলবে আজীবন। ১৯৮৬ সালে নিজের দেশকে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন তিনি।

লুক হারপার (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৯ – ২৬ ডিসেম্বর ২০২০) : মার্কিন কুস্তীগির জনাথন হাবার ২০১২ সালের মার্চে যোগ দেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কুস্তি মঞ্চ ডব্লিউডব্লিউই (WWE)-তে। এই মঞ্চে তিনি পরিচিতি পান ‘দি ওয়াট ফ্যামিলি’-র সদস্য লুক হারপার হিসাবে। দীর্ঘদিন থেকেই তিনি ফুসফুস জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।

এই তালিকায় আরও যুক্ত হবে অরুণ গুহ ঠাকুরতা, ওয়াজিদ খান, জয় প্রকাশ রেড্ডি, বাসু চট্টোপাধ্যায়, বিজয় মোহান্তি, যশোবন্ত সিংহ, শক্তি ঠাকুর, শর্বরী দত্ত, শ্যামল চক্রবর্তী, সন্তু মুখোপাধ্যায়, আসিফ বাসর এর নাম। তাঁরা সকলেই ছিলেন নিজের জগতের এক একজন কৃতি ব্যক্তি।

Advertisement
Previous articleধর্ম অবমাননার অভিযোগে সরানো হল দেবের নতুন সিনেমার টিজার
Next articleচলে এল ২০২১ : নতুন বছরে সবচেয়ে বেশি যে দিকে নজর থাকবে সবার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here