Advertisement
সজয় পাল : ২০১৯ সালের অবসানের পর শুরু হয়ে গিয়েছে আবারও একটা নতুন বছর, ২০২০। কত কিছুই না পরিবর্তন হয় নতুন সাল পরিবর্তনের সাথে। কিছু পরিবর্তন এতটাই গভীর হয়, বহুদিন দাগ কেটে থাকে মানব সমাজের বুকে। আবার কিছু পরিবর্তন হয় অত্যন্ত ধীর, অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে। আসলে সময়ের চাকায় চেপে পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বরং না হওয়াটা অস্বাভাবিক।
এমনিভাবে বর্তমান বিশ্ব জুড়ে গণতন্ত্রেরও পরিবর্তন হয়ে চলেছে খুব সূক্ষ্মভাবে। এমন একটা সময় ছিল, যখন রাজার ছেলে রাজা হত। জনগণকে সেটা মেনে নিতে হত বিনা বাক্যব্যয়ে। বর্তমান বিশ্বের অবশ্য অধিকাংশ দেশই এখন গণতন্ত্রকে মেনে নিয়েছে। সেখানে জনগণের সিদ্ধান্তই হয় শেষ সিদ্ধান্ত। জনগণ ভোটের মাধ্যমে যাকে নির্বাচন করে, ক্ষমতা থাকে তারই হাতে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে এই ব্যবস্থা–ই জনপ্রিয় হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। তাই একে একে অধিকাংশ দেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। রাজার অবসান ঘটেছে। ক্ষমতা গিয়েছে প্রজার হাতে।
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে তরান্বিত হচ্ছে সেই শাসন ব্যবস্থার। সম্প্রতি সুইডেনের ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসিস ইন্সটিটিউট (ভি–ডেম)-এর একটি গবেষণা পত্রে এমনই একটি তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৭৯টি দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালে সমস্ত বিশ্বে কর্তৃত্ববাদী শাসনের শিকার হয়েছে ৪১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ। আর সেই সংখ্যা ২০১৮ সালে এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ২৩০ কোটি। ১৭৯টি দেশের মধ্যে ১৫৮টি দেশে গত দশ বছরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনওরকম উন্নতি হয়নি। বরং অবনতি হয়েছে অনেক বেশি। এই সব দেশগুলির মধ্যে পোল্যান্ড, তুরস্ক, ভেনেজুয়েলা, হাঙ্গেরি, ফিলিপাইন, মালি, ব্রাজিল, ভারত-এর মতো গণতান্ত্রিক দেশকেও রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যাকে আধুনিক গণতন্ত্রের ধারক দেশ বলা হয়, তাকেও রাখা হয়েছে বেশ উপরের দিকেই।
তবে গণতন্ত্রের অবনতি যে সব দেশেই হয়েছে তা বলা যায় না। গাম্বিয়া, ফিজি, শ্রীলঙ্কা বা তিউনিসিয়ার মতো ছোটো দেশগুলিতে গণতন্ত্রের উন্নতি হয়েছে অনেকটাই। হংকং, ইরান, ইরাক, লেবানন প্রভৃতি দেশগুলিতে এখনও বিক্ষোভ চলছে গণতন্ত্রের দাবিতেই।
আসলে গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে জনগণের সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই নির্বাচিত হয় শাসক। কিন্তু সেই শাসকই ক্ষমতা হাতে পেয়ে পরবর্তীতে হয়ে ওঠে প্রভুত্ববাদী। ক্রমশ ধ্বংস করতে থাকে জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। তবে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে খুব দ্রুত। নয়তো আগামী প্রজন্ম আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে বাধ্য হবে।
Advertisement
Thanks