গোলাপ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোলাপী রঙের আভা। সবচেয়ে বেশি প্রচলনও রয়েছে এই গোলাপী রঙের গোলাপের। তবে সাদা, লাল, মেরুন, হলুদ, খয়েরি, বেগুনী বা মাল্টি কালারের গোলাপও এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে কালো গোলাপ। এই কালো গোলাপ নিয়ে অবশ্য রহস্যের শেষ নেই।

গোলাপ পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যার ফুল বাগিচার শখ, তার বাগানে অন্তত একটি বা একাধিক গোলাপের গাছ অবশ্যই থাকবে। যে কোনও অনুষ্ঠানে গোলাপের ব্যবহার সু-প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। যা ইতিহাস ঘাঁটলে সহজেই বুঝতে পারা যায়।
গোলাপের জন্ম প্রকৃতপক্ষে কোথায় সে বিষয়েও রয়েছে যথেষ্ট বিতর্ক। প্রাচীন ইতিহাসে ইউরোপ, এশিয়ায় গোলাপের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের লেখাতেও রয়েছে গোলাপের উল্লেখ। ভারতীয় পরিবেশেও বিভিন্ন সময়ে গোলাপের কথাও উঠে এসেছে।
সমগ্র বিশ্ব জুড়ে গোলাপের প্রায় ৩ হাজার প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে একাধিক প্রজাতির গোলাপ তৈরি করেছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা। এই প্রজাতি নির্ণয় করা হয়েছে গোলাপের রঙ, গাছের প্রকৃতি প্রভৃতি নির্দেশ করে।
গোলাপ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গোলাপী রঙের আভা। সবচেয়ে বেশি প্রচলনও রয়েছে এই গোলাপী রঙের গোলাপের। তবে সাদা, লাল, মেরুন, হলুদ, খয়েরি, বেগুনী বা মাল্টি কালারের গোলাপও এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে কালো গোলাপ। এই কালো গোলাপ নিয়ে অবশ্য রহস্যের শেষ নেই। একাধিক গল্প, উপন্যাস বা রহস্য কাহিনিতে বহুবার উঠে এসেছে এই কালো গোলাপ এর কথা। যদিও প্রশ্ন থাকে, প্রকৃত বা সম্পূর্ণ কালো গোলাপ আদৌ কি পাওয়া সম্ভব। যদি পাওয়া যায়, তাহলে কোথায় মিলবে এর দেখা।
প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান কিন্তু কালো গোলাপ এর কোনও অস্তিত্ব মানতে চাই না। অন্তত বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে প্রকৃতির কোনও ফুলের রঙই কালো হওয়া সম্ভব নয়। আসলে কোনও বস্তু বা কোনও স্থান থেকে যদি আলো ফিরে আসতে না পারে তবে ওই বস্তু বা স্থানকে কালো দেখাবে। অথবা কোনও জীবন্ত বস্তুতে যদি অতি মাত্রায় মেলানিন সঞ্চিত হয়, তবেই ওই জীবন্ত বস্তুকে কালো দেখায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ফুল আবিস্কার হয়নি, যার থেকে আলো ফিরে আসে না বা যাতে মাত্রাতিরিক্ত মেলানিন সঞ্চিত হয়। তাই কালো গোলাপ কখনওই পাওয়া সম্ভব নয়।
এবার হয়তো অনেকেই বলতে চায়বেন, বিভিন্ন বাগিচায় তারা যে কালো গোলাপ দেখেছেন, সেগুলি আসলে কী? হ্যাঁ, তারা নিশ্চয় দেখেছেন। কিন্তু দেখার মধ্যে অবশ্যই কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সেই গোলাপ প্রকৃত বা সম্পূর্ণ কালো গোলাপ একেবারেই নয়। অতিরিক্ত গাঢ় লাল, খয়েরি, মেরুন বা বেগুনী রঙের গোলাপই সচারচার কালো গোলাপ হিসাবে ধরা দেয় দর্শকের চোখে। নিখুঁত পর্যবেক্ষণে এই গোলাপের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হতে বাধ্য।
এখনও পর্যন্ত কিছুটা নিখুঁত কালো গোলাপ এর সন্ধান মিলেছে তুরস্কের ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব উপকূলে সানলুরফা প্রদেশের হালফেটি জেলায়। এখানকার এক বিরল প্রজাতির গোলাপ এর রঙ সবচেয়ে বেশি কালো বলে মান্য করা হয়েছে। আসলে এই গোলাপের প্রকৃত রঙ গাঢ় মেরুন। বসন্ত ঋতুতে এই গোলাপ ফুটতে শুরু করে। তারপর গ্রীষ্ম যত এগিয়ে আসে গোলাপের রঙ আরও গাঢ় হতে থাকে। শেষে গ্রীষ্মের প্রখরতায় এর রঙ প্রায় নিখুঁত কালোতে পরিণত হয়। মনে হয় যেন প্রকৃত কালো গোলাপ ফুটে রয়েছে বাগিচায়।
উদ্ভিত বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, হালফেটি অঞ্চলের মাটিতে মিশে রয়েছে দ্রবীভূত হাইড্রোজেন। এর সঙ্গে গ্রীষ্মের প্রখরতা মিশে ওই বিরল প্রজাতির গোলাপের রঙ হয়ে ওঠে প্রায় নিখুঁত কালো।
তবে গোলাপ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেমে নেই। তারা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে কীভাবে প্রকৃত নিখুঁত কালো গোলাপ তৈরি করা যায়, তা নিয়ে নিরন্তন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। হয়তো ভবিষ্যতে নিখুঁত কালো গোলাপ এর দেখা মিললেও মিলতে পারে।