এই ১০ জন উইকেট কিপারকে আজীবন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব

Advertisement

উইকেট কিপারদের কাজ শুধু উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে বল আটকানো নয়, ব্যাট হাতেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ক্রিকেট বিশ্বের এমনই ১০ জন উইকেট রক্ষক ছিলেন, যাঁরা উইকেট কিপিং-য়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও সমান পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। দেশকে একা হাতে জিতিয়েছেন বহুবার। এঁরা শুধু নিজের দেশের দর্শকদের কাছেই নয়, সারা বিশ্বের ক্রিকেট প্রেমীদের কাছেও কিংবদন্তী হয়ে থাকবেন। – ছবি : সংগৃহীত

cricket world will always remember these 10 wicket keepers

জনদর্পণ ডেস্ক : সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ক্রিকেটের ৩ ফরম্যাটেই সাবলীলভাবে রাজত্ব করে গিয়েছেন এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হিসাবেই মনে রাখবে আজীবন। তবে শুধু ধোনি নন, বিভিন্ন সময়ে ক্রিকেট বিশ্ব পেয়েছে এমন কয়েকজন উইকেট রক্ষককে, তাঁরা শুধু উইকেট কিপিং-য়েই নয়, ব্যাট হাতেও সমান পারদর্শী ছিলেন।

১০. জেফরি ডুজন (১৯৮১-১৯৯১) :তাঁর পুরো নাম পিটার জেফরি লরি ডুজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই প্রাক্তন ক্রিকেটারটিকে তাঁর উইকেট কিপিং-য়ের জন্যই আজীবন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁর বিশ্বস্ত হাতের নাগাল এড়িয়ে একটি মাছিও গলার সাহস পেত না। ১০ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৮১টি টেস্ট ও ১৬৯টি একদিনের ম্যাচ। রান করেছেন যথাক্রমে ৩৩২২ ও ১৯৪৫। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ২৬৭টি ও ১৮৩টি। এছাড়াও তিনি স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ৫টি ও ২১টি।

৯. ইয়ান হিলি (১৯৮৮-১৯৯৯) : অস্ট্রেলিয়ার এই কিংবদন্তি উইকেট রক্ষককে তাঁর উইকেট কিপিং-য়ের জনই মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁর বিশ্বস্ত হাতের গ্লাপ্স থেকে রক্ষা পায়নি বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানরাও। ১১ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১১৯টি টেস্ট ও ১৬৮টি একদিনের ম্যাচ। ব্যাট হাতে রান করেছেন যথাক্রমে ৪৩৫৬ ও ১৭৬৪। ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ৩৬৬টি ও ১৯৪টি। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ২৯টি ও ৩৯টি।

৮. অ্যালেক স্টুয়ার্ট (১৯৮৯-২০০৩) :ইংল্যান্ডের তারকা এই উইকেট কিপারটি কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং-য়েও সামান ছাপ রেখে গিয়েছেন। একদিনের থেকে টেস্ট ম্যাচেই তাঁর প্রাধান্য ছিল বেশি। ১৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১৩৩টি টেস্ট ও ১৭০টি একদিনের ম্যাচ। টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি রান করেছেন ৮৪৬৩। একদিনের ক্যারিয়ারে তাঁর রান ৪৬৬৭। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে ক্যাচ ধরেছেন যথাক্রমে ২৬৩টি ও ১৫৯টি। সেই সঙ্গে স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ১৪টি ও ১৫টি।

৭. মইন খান (১৯৯০-২০০৪) : উইকেট কিপিং-য়ের পাশাপাশি পাকিস্থানের এই ক্রিকেটারটি ব্যাট হাতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তাঁকে দলের হয়ে অধিনায়কত্বের ভূমিকাতেও দেখা গিয়েছে। ৬৯টি টেস্ট ও ২১৯টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি। রান করেছেন যথাক্রমে ২৭৪১ ও ৩২৬৬। উইকেটের পিছনে ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ১২৮টি ও ২১৪টি। স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ২০টি ৭৩টি।

৬. অ্যান্ড্রু ফ্লাউয়ার (১৯৯২-২০০৩) :জিম্বাবয়ের এই ক্রিকেটারটি একদিকে যেমন উইকেট রক্ষক ছিলেন, ওপর দিকে বড়ো ব্যাটসম্যানও মানা হত তাঁকে। নিজের যমজ ভাই গ্র্যান্ড ফ্লাউয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বহু স্মরণীয় ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ক্রিজে একবার দাঁড়িয়ে যেতে পারলে, তাঁর সময়কার যে কোনও বিপক্ষ দলের ত্রাস হয়ে উঠতেন তিনি। দীর্ঘ ১১ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৬৩টি টেস্ট ও ২১৩টি একদিনের ম্যাচ। টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে যথাক্রমে তিনি রান করেছেন ৪৭৯৪ ও ৬৭৮৬ রান। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে টেস্ট ও একদিনের ম্যাচে যথাক্রমে ক্যাচ ও স্ট্যাম্পিং করেছেন ১৫১টি ও ৯টি এবং ১৪১টি ও ৩২টি।

cricket world will always remember these 10 wicket keepers 2

৫. ব্র্যান্ডন ম্যাকুলাম (২০০২-২০১৬) :আধুনিক গতিময় ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানকে তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিং-য়ের জন্যই মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। টেস্ট, একদিন ও টি-টুয়েন্টি এই ৩ ফরম্যাটেই সমানভাবে ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর সময়ই নিউজিল্যান্ড ২০১৫ সালে প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছতে পেরেছিল। তাঁর দীর্ঘ ১৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১০১টি টেস্ট, ১৬০টি একদিন ও ৭১টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। ব্যাট হাতে রান করেছেন যথাক্রমে ৬৪৫৩, ৬০৮৩ ও ২১৪০। ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ১৯৮টি, ২৬২টি ও ৩৬টি। এরই সঙ্গে স্ট্যাম্পিং করেছেন ১১টি, ১৫টি ও ১৮টি।

৪. মার্ক বাউচার (১৯৯৭-২০১২) :সাউথ আফ্রিকার সর্বকালের অন্যতম সেরা এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানটি উইকেট কিপিং-য়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দলের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রানও করেছেন। তাঁর ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১৪৭টি টেস্ট ও ২৯৫টি একদিনের ম্যাচ। ব্যাট হাতে রান করেছেন যথাক্রমে ৫৫১৫ ও ৪৬৮৬। ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ৫৩২টি ও ৪০৩টি। স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ২৩টি ও ২২টি।

৩. কুমার সাঙ্গাকারা (২০০০-২০১৫) : উইকেট কিপিং-য়ের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার এই কিংবদন্তী ক্রিকেটারটি ছাপ রেখেছেন তাঁর ব্যাটিং-এ। তিনিই একমাত্র উইকেট কিপার, যিনি ব্যাট হাতে টেস্ট ও একদিনের উভয় ফরম্যাটেই ১০ হাজারের বেশি রান করেছেন। একদিনের ক্রিকেট ফরম্যাটে ব্যক্তিগত রানের দিক থেকে সচিন টেন্ডুলকরের পরই বর্তমানে তাঁর স্থান। দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ১৩৪টি টেস্ট, ৪০৪টি একদিন ও ৫৬টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। যথাক্রমে রান করেছেন ১২৪০০, ১৪২৩৪ ও ১৩৮২। উইকেটের পিছনে ক্যাচ ধরেছেন যথাক্রমে ১৮২টি, ৪০২টি ও ২৫টি। স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ২০টি, ৯৯টি ও ২০টি।

২. মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (২০০৪-২০২০) : সম্প্রতি অবসর নেওয়া এই ভারত অধিনায়ককে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই ভারতের সর্বকালের সেরা উইকেট কিপার ও অধিনায়ক মনে করেন। হ্যালিকপটার শটের জনক এই কিংবদন্তী উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানকে অনেকে সর্বকালের সেরা ফিনিসারও বলেছেন। ২০১১ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে তাঁর কাপ জেতানো ছক্কার কথা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব। ঝাঁ-চকচকে তাঁর ১৬ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সাজানো রয়েছে ৯০টি টেস্ট, ৩৫০টি একদিন ও ৯৮টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। রান করেছেন যথাক্রমে ৪৮৭৬, ১০৭৭৩ ও ১৬১৭। উইকেটের পিছনে ক্যাচ নিয়েছেন যথাক্রমে ২৫৬টি, ৩২১টি ও ৫৭টি। স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ৩৮টি, ১২৩টি ও ৩৪টি।

১. অ্যাডম গিলক্রিস্ট (১৯৯৬-২০০৮) : ইয়ান হিলির যোগ্য উত্তরসূরি এই অস্ট্রেলিয়ান উইকেট কিপারটি কিপিং-য়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও বিপক্ষ দলের ত্রাস হয়ে উঠতেন। ম্যাথু হেডেনকে সাথে নিয়ে তাঁর ওপেনিং জুটি ছিল বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনিং জুটি। একদিনের ক্রিকেটে সচিন-সৌরভের ওপেনিং জুটির পরেই ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা নাম রেখেছেন হেডেন-গিলক্রিস্ট-এর জুটিকে। ১২ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে তিনি খেলেছেন ৯৬টি টেস্ট ও ২৮৭টি একদিনের ম্যাচ। রান করেছেন যথাক্রমে ৫৫৭০ ও ৯৬১৯ রান। উইকেটের পিছনে ক্যাচ নিয়েছেন ৩৭৯টি ও ৪১৭টি। স্ট্যাম্পিং করেছেন যথাক্রমে ৩৭টি ও ৫৫টি।

Advertisement
Previous articleদফায় দফায় বৃষ্টিতে অফুরন্ত ক্ষতি ফসলের, বাজারে সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া
Next articleওরা হারিয়ে যায়নি, শুধু বদলে গিয়েছে ওদের পেশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here