এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-এ সংরক্ষিত রয়েছে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অজানা ইতিহাস (ভিডিও সহ)

Advertisement

প্রায় ৩৫ বছর আগে সুদূর জার্মান থেকে শান্তিনিকেতনে ভারতীয় দর্শন নিয়ে গবেষনা করতে এসেছিলেন মার্টিন কেম্পচেন। গবেষণা করার সময়কালে তিনি শান্তিনিকেতন সংলগ্ন একাধিক সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম পরিদর্শন করেন। আর সেই সঙ্গে সাঁওতাল জনজীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও তিনি আকর্ষিত হন। সেসময় তিনি এই জনগোষ্ঠীটির সংস্কৃতি বিষয়ক কোনও সংগ্রহালয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। তারপর ধীরে ধীরে তাঁর অনুপ্রেরণাতেই গড়ে উঠতে থাকে বর্তমানের এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-টি।


এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-এ সংরক্ষিত রয়েছে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর অজানা ইতিহাস

সুজয় ঘোষাল ও বিজয় ঘোষাল : ধারণা করা হয়, সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষেরা অস্ট্রিক ভাষা-ভাষী প্রোটো-অস্টালয়েড় জনগোষ্ঠীর বংশধর। তবে ভারতের এই আদি জনগোষ্ঠী-টির সমাজ একটি সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তাই এদের প্রত্যাহিক জীবনে রয়েছে আচার-রীতিকে ধরে রাখার দৃঢ় প্রয়াস। তবুও এই জনগোষ্ঠীটি সম্পর্কে অনেক কিছুই থেকে গিয়েছে অজানা। আবার অনেক কিছুই সময় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল রেখে গিয়েছে হারিয়ে বা হারানোর পথে। এরই কিছু দৃষ্টান্ত সযত্নে সংগ্রহ করা হয়েছে বিষ্ণুবাটি গ্রামের ছোট্ট এক সাঁওতাল মিউজিয়াম-এ। জনদর্পণ-এ ক্যামেরায় তারই কিছু খণ্ড চিত্র ভিডিও আকারে তুলে ধরা হয়েছে। ৩টি পর্বে দেখানো হয়েছে সেই চিত্রগুলি।


Museum Of Santal Culture – Part 1

বোলপুর-শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই বিষ্ণুবাটি গ্রামটি। এটি একটি সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম। এখানে দুটি ঘর জুড়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সাঁওতাল তথা আদিবাসী সমাজের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের সরঞ্জাম, পরম্পরা, হাতিয়ার প্রভৃতিতে। যা বৈচিত্র্যময় লোকশিল্পের এক বিরাট সম্ভার বলা যেতে পারে। আর এটিই রাঢ় বঙ্গের একমাত্র সাঁওতাল মিউজিয়াম।

তবে মিউজিয়ামটি গড়ে তোলার পিছনে অবশ্য অনেক বড়ো অবদান রয়েছে এক জার্মানির। জানা যায়, প্রায় ৩৫ বছর আগে সুদূর জার্মান থেকে শান্তিনিকেতনে ভারতীয় দর্শন নিয়ে গবেষনা করতে এসেছিলেন মার্টিন কেম্পচেন। গবেষণা করার সময়কালে তিনি শান্তিনিকেতন সংলগ্ন একাধিক সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম পরিদর্শন করেন। আর সেই সঙ্গে সাঁওতাল জনজীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কেও তিনি আকর্ষিত হন। সেসময় তিনি এই জনগোষ্ঠীটির সংস্কৃতি বিষয়ক কোনও সংগ্রহালয়ের প্রয়োজন অনুভব করেন। তারপর ধীরে ধীরে তাঁর অনুপ্রেরণাতেই গড়ে উঠতে থাকে বর্তমানের এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-টি।


Museum Of Santal Culture – Part 2

মার্টিন কেম্পচেন সেসময়ে পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন গোকুল হাঁসদা, সোনা মুর্মু, বড় বাসকে, লক্ষ্মীরাম হেমরম সহ আরও কয়েকজন স্থানীয় আদিবাসী বাসিন্দাদের। ফলে তাঁর কাজ প্রায় অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এই মিউজিয়ামে সংগৃহীত রয়েছে সাঁওতাল জনজীবনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও লোকশিল্প বিষয়ক একাধিক সামগ্রী। যা মিউজিয়াম-কে করে তুলেছে অনেক আকর্ষণীয় ও এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য। পরে বিষ্ণুবাটির এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-টির নাম দেওয়া হয় ‘সাঁওতাল সংস্কৃতি সংগ্রহালয়’ (Museum Of Santal Culture)।


Museum Of Santal Culture – Part 3

গ্রাম ঢুকতেই চোখে পড়বে এই জাদুঘর বা মিউজিয়ামটি-কে। বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে এখানে সংগ্রহ করা হয়েছে আদিবাসী সমাজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ইঁদুর ধরার খাঁচা, পাখি ধরার ফাঁদ, বিভিন্ন ধরণের জাল, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, শিকার করার অস্ত্র, ঢেঁকি, সাঁওতাল নারী-পুরুষের জীবন-যাপন বিষয়ক সামগ্রী, মহিলাদের ব্যবহার্য অলংকার, এক হাজার বছরের প্রস্তরখণ্ড প্রভৃতি। এছাড়াও রয়েছে কিছু দুষ্প্রাপ্য দেওয়াল চিত্র ও বিভিন্ন ফটোগ্রাফি। সেখানে উঠে এসেছে অতীত ও বর্তমান সময়ের আদিবাসী জনজীবনের বিবাহ, মৃতুক্রিয়া ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বির্বতনের চিত্র। মিউজিয়ামটি তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন বড় বাসকে। বর্তমানে এই সাঁওতাল মিউজিয়াম-টির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা বিমল বাসকি।

Advertisement
Previous articleCorona : আবার নতুন ভ্যারিয়েন্ট-এর সন্ধান, উত্তাল আফ্রিকা সহ সমগ্র বিশ্ব
Next articleঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ এর অভিমুখ এখনও স্পষ্ট নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here