উপ-পীঠ : বীরভূমের ইটণ্ডাতে রয়েছে সতীর উপ-পীঠ কেশবাঈ চণ্ডী (ভিডিও সহ)

Advertisement

ভাবতে অবাক লাগলেও সতীর ৫১টি মহাপীঠের মধ্যে ৫টিই রয়েছে বীরভূম জেলায়। আবার এই জেলাতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি উপ-পীঠ। জনশ্রুতি অনুযায়ী, যার একটি রয়েছে বীরভূমের ইটণ্ডা গ্রামে। দেবী এখানে কেশবাঈ চণ্ডী নামে পরিচিত। ইটণ্ডার রথতলা বা চণ্ডীতলার এক সুবিশাল পাকুড় গাছের নিচে প্রাচীন এই কেশবাঈ মন্দিরটি কোনও রকমে টিকে রয়েছে। হঠাৎ দেখলে যে কারোরই মন্দিরটিকে চিনতে ভুল হতে পারে।


উপ-পীঠ : বীরভূমের ইটণ্ডাতে রয়েছে সতীর উপ-পীঠ কেশবাঈ চণ্ডী

সজয় পাল : দেবী সতীর ৫১টি মহাপীঠ সম্পর্কে কম-বেশি প্রায় সকলেরই জানা। প্রজাপতি দক্ষের মহাযজ্ঞে আমন্ত্রণ পাননি জামাতা মহাদেব। স্বামীর প্রতি পিতা দক্ষের এরূপ অসম্মানজনক আচরণে দেবী সতী অপমানিত বোধ করে যজ্ঞানুষ্ঠানে সকলের সম্মুখেই দেহ ত্যাগ করেন। তখন মহাদেব বিষণ্ণতায় ও ক্রোধে সতীর দেহ নিয়ে শুরু করেন প্রলয় নৃত্য। ভগবান বিষ্ণু তখন সৃষ্টি রক্ষার্থে তার সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত করে দেন। পৃথিবীর যে সমস্ত স্থানে সতীর দেহ খণ্ড পতিত হয়েছিল, সেই স্থানগুলি পরে মহাপীঠ নামে পরিচিত হয়।

পৌরাণিক এই কাহিনি কম-বেশি প্রায় সকলেরই জানা। আর এই ৫১টি মহাপীঠ সম্পর্কেও অজানা কিছু নেই। তবে অনেকেই হয়তো জানে না, সতীর এই ৫১টি মহাপীঠ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি উপ-পীঠ। যেগুলি হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান। বলা বাহুল্য, এই স্থানগুলি বেশ প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক দিক থেকেও এগুলির গুরুত্ব কিছু কম নয়।

ভাবতে অবাক লাগলেও সতীর ৫১টি মহাপীঠের মধ্যে ৫টিই রয়েছে বীরভূম জেলায়। আবার এই জেলাতেই রয়েছে বেশ কয়েকটি উপ-পীঠ। জনশ্রুতি অনুযায়ী, যার একটি রয়েছে বীরভূমের ইটণ্ডা গ্রামে। দেবী এখানে কেশবাঈ চণ্ডী নামে পরিচিত।


উপ-পীঠ : ইটণ্ডার কেশবাঈ মন্দির (ভিডিও)

ইটণ্ডার রথতলা বা চণ্ডীতলার এক সুবিশাল পাকুড় গাছের নিচে প্রাচীন এই কেশবাঈ মন্দিরটি কোনও রকমে টিকে রয়েছে। হঠাৎ দেখলে যে কারোরই মন্দিরটিকে চিনতে ভুল হতে পারে। কারণ বছরের পর বছর ধরে অযত্ন ও অবহেলার শিকার হয়ে প্রাচীন এই মন্দিরটি আজ দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ধ্বংস হওয়ার মুখে।

পুরাণ অনুযায়ী, বৃন্দাবনে সতীর চুল বা কেশ পতিত হয়ে স্থাপিত হয়েছিল কাত্যায়নী মন্দির। জনশ্রুতি আছে, ইটণ্ডার এই স্থানেও সেই চুল বা কেশের কিছুটা অংশ পতিত হয়েছিল। পরে এটি সতীর উপ-পীঠ কেশবাঈ চণ্ডী নামে পরিচিত হয়েছে। এককালে দেবী কেশবাঈ ইটান্ডা সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির ‘শাসনদেবী’ ছিল।

পোড়ামাটির ছোট ছোট ইট দিয়ে নির্মিত এই মন্দিরটি এক সময়ে চালা না দেউল প্রকৃতির ছিল, তা এখন আর কোনওভাবে বোঝার উপায় নেই। সমগ্র মন্দিরটিকেই ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে এক সুবিশাল পাকুড় গাছ। মন্দিরটির নির্মাণকাল সম্পর্কেও ধন্দে রয়েছেন ঐতিহাসিকেরা।

ঐতিহাসিকদের মতে একাধিকবার আক্রমণের শিকার হয়েছে সতীর এই উপ-পীঠ কেশবাঈ মন্দিরটি। ষোলশ শতকের দিকে কালাপাহাড়ের আক্রমণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মন্দির ও সেই সঙ্গে দেবী মূর্তি। এছাড়াও কয়েকবার বর্গী আক্রমণও হয়েছে এখানে। তখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এই মন্দির। এক সময় এই মন্দিরের গর্ভগৃহে কষ্টিক পাথরের দেবী মূর্তি শোভা পেত। পরে চুরি হয়ে যায়। তবে নিত্য পুজো হয় এখনও প্রতি নিয়ত।

Advertisement
Previous articleরাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে পারে সমগ্র বিশ্ব সহ ভারত
Next articleপ্রথম শিবরাত্রি পালন করেছিল এক নিষ্ঠুর ব্যাধ নিজের অজান্তেই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here