হঠাৎ কেন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা? একাধিক বিশেষজ্ঞ এর জন্য দায়ী করছেন মানুষের উদাসীনতাকেই। করোনা সংক্রান্ত প্রশাসনিক নির্দেশনামা না মেনে মানুষ যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজের ইচ্ছায়। এমনকি বারংবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হলেও সেই নির্দেশও মানছে না অধিকাংশ মানুষ। কোনওরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একাধিক স্থানে জনসমাবেশও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাই লাগামছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। |

জনদর্পণ ডেস্ক : গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে গোটা দেশ জুড়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার দৈনিক গড় নেমে এসেছিল ৮-১২ হাজারের মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছিল, এই সংখ্যা হয়তো আরও নিম্নমুখী হবে। ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল গোটা দেশ জুড়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হওয়া।
কিন্তু এই ধারণায় চিড় ধরতে শুরু করে গত ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে। কারণ আবারও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। আর এই সংখ্যা প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে মার্চের প্রথম থেকেই। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেখানে সমগ্র দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১১ লাখের কিছু বেশি। সেই সংখ্যা ৩১ মার্চ নাগাদ পৌঁছে যায় ১ কোটি ২২ লাখের কিছু বেশিতে। অর্থাৎ গত ১ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১১ লাখ।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এপ্রিলের প্রথম থেকে সেই সংখ্যা যেন আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ১ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ১১ দিনেই সমগ্র দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ১৩ লাখ। পিছিয়ে নেই পশ্চিমবঙ্গও। এই রাজ্যেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গোটা মার্চ জুড়ে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ছিল ৩ অঙ্কে সীমাবদ্ধ। এপ্রিলের প্রথমেই সেই সংখ্যা ৪ অঙ্কে পৌঁছে গিয়েছে। ১০ ও ১১ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দৈনিক ৪ হাজারের উপর।
হঠাৎ কেন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা? একাধিক বিশেষজ্ঞ এর জন্য দায়ী করছেন মানুষের উদাসীনতাকেই। করোনা সংক্রান্ত প্রশাসনিক নির্দেশনামা না মেনে মানুষ যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে নিজের ইচ্ছায়। এমনকি বারংবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলা হলেও সেই নির্দেশও মানছে না অধিকাংশ মানুষ। কোনওরকম স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একাধিক স্থানে জনসমাবেশও ঘটতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, তাই লাগামছাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা।
যদিও গণহারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। ভারতে এই মুহূর্তে কো-ভ্যাকসিন ও কোভিশিল্ড-কে গণহারে প্রয়োগের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে সূত্রে জানা গিয়েছে।
বীরভূম জেলার আমোদপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক বিশ্বজিৎ পাল গত ৩ এপ্রিল কো-ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ সম্পূর্ণ করেছিলেন। বিশ্বজিৎ পাল জনদর্পণ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, এরপরই তিনি করোনার উপসর্গ জনিত জ্বরে আক্রান্ত হন। ৯ এপ্রিল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে তিনি ও তাঁর মা কোভিড পরীক্ষা করালে উভয়ের রিপোর্টই পজিটিভ আসে। যদিও তাঁর মা নিলিমা পাল করোনা ভ্যাকসিন নেননি। উভয়েই এখন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হলেও উদ্বেগের কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ভ্যাকসিন নেওয়া হলে শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার বৃদ্ধি পায়। জ্বর হলেও অতিরিক্ত ভয়ের কোনও কারণ থাকে না।