দীর্ঘদিন পর নাসা যখন আবার চাঁদের বুকে মানুষ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই মিশনেরও তারা নামকরণ করেছে অ্যাপোলো-র বোন ‘আর্টেমিস’-এর নামানুসারে। জানা যাচ্ছে, নাসা চাঁদের খুব কাছেই একটি মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে চলেছে। যেখান থেকে নতুন এই মিশন পরিচালনা করা যাবে। এবারের মিশনে পুরুষের পাশাপাশি রাখা হয়েছে প্রথম কোনও মহিলাকে। এছাড়াও প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি এই মিশনে অংশগ্রহণ করবেন।

অনলাইন পেপার : শেষবার চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্ন পড়েছিল ১৯৭২ সাল নাগাদ। সে বছর ১৯ ডিসেম্বর ৩ জন নভোচারীকে নিয়ে চাঁদের বুকে নেমেছিল চন্দ্রযান অ্যাপোলো ১৭। আর এই অ্যাপোলো ১৭-ই ছিল চাঁদে মানুষ অবতরণের শেষ চন্দ্রযান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শেষ অভিযানে চাঁদে অবতরণ করেছিলেন ইউজিন কারনান, রোনাল্ড ইভান্স ও হ্যারিসন স্মিথ।
দীর্ঘদিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’ নতুন করে আবারও একবার চাঁদে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দিকে নাসা এই অভিযানের জন্য ২০২৪ সালকে স্থির করেছিল। কিন্তু পরে সম্প্রতি আরও একবছর পিছিয়ে ২০২৫ সালের কথা ঘোষণা করেছে নাসা। তাদের অভিযান এই ১ বছর পিছিয়ে যাওয়ার কি কারণ থাকতে পারে তা সুস্পষ্টভাবে এখনও জানা যায়নি। তবে সম্প্রতি বিবিসি সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।
নাসা চাঁদে নতুন করে মানুষ পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘আর্টেমিস’। লক্ষ্য করে দেখা গিয়েছে ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত যে ১৭টি চন্দ্রযান তারা উৎক্ষেপণ করেছিল সেগুলির সবই ছিল ‘অ্যাপোলো মিশন’-এর। তার মধ্যে অ্যাপোলো ১১ প্রথম চাঁদের মাটিতে মানুষ নামাতে সক্ষম হয়। এরপর আরও কয়েকটি অভিযানে তারা এখনও পর্যন্ত ১২ জন নভোচারীকে চাঁদের মাটিতে নামাতে পেরেছে।
এই অ্যাপোলো-র নামকরণ তারা করেছিল গ্রীক দেবতা ‘অ্যাপোলো’-র নামানুসারে। দীর্ঘদিন পর নাসা যখন আবার চাঁদের বুকে মানুষ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই মিশনেরও তারা নামকরণ করেছে অ্যাপোলো-র বোন ‘আর্টেমিস’-এর নামানুসারে।
জানা যাচ্ছে, নাসা চাঁদের খুব কাছেই একটি মহাকাশ স্টেশন তৈরি করতে চলেছে। যেখান থেকে নতুন এই মিশন পরিচালনা করা যাবে। এবারের মিশনে পুরুষের পাশাপাশি রাখা হয়েছে প্রথম কোনও মহিলাকে। এছাড়াও প্রথম কোনও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি এই মিশনে অংশগ্রহণ করবেন। তবে কোন ৩ জন এই মিশনে অংশগ্রহণ করবেন, তা এখনও স্পষ্ট করে জানা যায়নি।
বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, আর্টেমিস মিশনের অবতরণ যান তৈরির জন্য ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স (Space X) এর সঙ্গে যে চুক্তিপত্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নাসা, সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছেন জেফ বেজস। তাঁর বক্তব্য, এই মিশনের জন্য অন্য সংস্থাগুলির কাছে কোনও দরপত্র রাখা হয়নি। তবে নাসা জানিয়েছে, মার্কিন সরকার এই মিশনের জন্য খুব বেশি অর্থ দিতে না পারায়, তারা দরপত্রের পক্রিয়ায় যেতে পারবে না।
নাসা নিজেই স্বীকার করেছে, এই সমস্ত আইনি জটিলতার জন্যই আর্টেমিস মিশন পিছিয়ে গিয়েছে। এছাড়াও অন্য সূত্র বলছে, কিছুদিন থেকেই বিশেষজ্ঞদের দাবি ছিল, এই মিশনের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে মিশনের সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
যাইহোক, এখনও পর্যন্ত চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য ১ বছর পিছিয়ে ২০২৫ সালকেই স্থির রেখেছে নাসা। এই সময়ের মধ্যে তারা ৩ বার চন্দ্রাভিযান পূরণ করতে চাই। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ মনুষ্যবিহীন আর্টেমিস ১ তারা পাঠাতে চাইছে চাঁদের কক্ষপথে। সেখানে ২১ দিন ধরে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করবে এটি। এরপর আর্টেমিস ২-কে চাঁদের কক্ষপথে মানুষ সহ তারা পাঠাবে ২০২৪ সাল নাগাদ। তবে এটি চাঁদে অবতরণ করবে না। অবশেষে এই মিশনের তৃতীয় মহাকাশযান আর্টেমিস ৩ মানুষ নিয়ে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করবে ২০২৫ সালে।