Advertisement
দেখতে অনেকটা পার্থেনিয়ামের মতো। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে আর্টেমিসিয়া পার্থেনিয়ামের সম্পূর্ণ বিপরীত। পার্থেনিয়াম যেখানে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করে, আর্টেমিসিয়া এক বা একাধিক রোগের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইতিমধ্যে ম্যালেরিয়া রোগের প্রতিষেধক হিসাবে এই গাছ ব্যবহৃত হতে শুরু হয়েছে। এমনকি করোনা চিকিৎসাতেও এই গাছ কোনও ভূমিকা রাখতে পারে কিনা, তা নিয়েও চলছে গবেষণা। – ছবি : সংগৃহীত
|
অনলাইন পেপার : উদ্ভিদের গুণাগুণের কোনও শেষ নেই। যখন হোমিওপ্যাথি বা এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হয়নি, তখন উদ্ভিদই ছিল একমাত্র চিকিৎসার মাধ্যম। এক এক রকম উদ্ভিদের রয়েছে এক বা একাধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে যার সবিস্তারিত বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়। যদিও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিকেই এখন বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে মানুষ। তবু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত ওষুধগুলির মধ্যে বহু ওষুধ তৈরিতে আজও উদ্ভিদের ওপরই নির্ভর করতে হয়।
এই যেমন ম্যালেরিয়া রোধে যে কুইনাইন ব্যবহার করা, তা আসে মূলত সিঙ্কোনা গাছ থেকে। তবে আরও একটি উদ্ভিদ ম্যালেরিয়া রোধ করতে পারে। যে ব্যাপারটি ১৯৭০ সালে চিনের একদল বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেছিলেন। তাঁরা ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করার সময় লক্ষ্য করেন ‘আর্টেমিসিয়া’ নামের একটি উদ্ভিদ এই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে। পরে ম্যালেরিয়ার যে ভাগগুলি ক্লোরোকুইন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, তার চিকিৎসায় আর্টেমিসিন ভিত্তিক থেরাপি ‘এসিটি’ ব্যবহারের উপর ছাড় দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
আর্টেমিসিয়া, যার আদি বসতি রাশিয়া। পরে অন্য দেশগুলিতেও, বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলগুলিতে এটি ছড়িয়ে পরে। আর্টেমিসিয়া দেখতে অনেকটা পার্থেনিয়াম উদ্ভিদের মতো। তবে গুণে এই উদ্ভিদ দুটি একেবারেই বিপরীত। পার্থেনিয়াম যেখানে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়, আর্টেমিসিয়া একাধিক রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করে। অনেকগুলি ভাগ রয়েছে এর। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া ও আর্টেমিসিয়া আফ্রা।
তবে এবার করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও শিরোনামে উঠে এসেছে এই আর্টেমিসিয়া। বিবিসি সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, গত এপ্রিলে মাদাগাস্কার দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রি রাজোইলিনা প্রচার করেছিলেন, আর্টেমিসিয়া দিয়ে তৈরি পানীয়, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিড-অর্গানিক্স’, এটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে করোনা চিকিৎসায় কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে। পরে ওই দেশটিতে এর ক্যাপসুল ও ইনজেকশনও তৈরি করা হয়েছে।
কিন্তু প্রকৃত পক্ষে করোনা চিকিৎসায় এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ কতটা কার্যকর, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ‘হু’-ও জানিয়েছে, তারা এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ পায়নি, যা থেকে ধরে নেওয়া হবে এই গাছ থেকে তৈরি কোনও পণ্য করোনা চিকিৎসায় ভূমিকা নিচ্ছে।
তবে এই আর্টেমিসিয়া নিয়ে গবেষণা থেমে নেই। আর্টেমিসিয়া এ্যানুয়া গাছের রস নিয়ে গবেষণা করেছেন জার্মান ও ড্যানিস বিজ্ঞানীরা। তাঁরা ইথানলের সঙ্গে এই রস ব্যবহার করে দেখেছেন, অ্যান্টি-ভাইরাল হিসাবে এটি কাজ দিচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিজ্ঞানীরাও এই গাছ নিয়ে বেশ উৎসাহী। তারাও করোনা চিকিৎসায় এই গাছের কোনও ভূমিকা আছে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। চিনের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় ২ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গাছ ব্যবহার হয়ে আসছে। সেদেশের বিজ্ঞানীরাও নতুন করে এই গাছ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। চিনের প্রাচীন ভেসজশাস্ত্রে আর্টেমিসিয়া-কে বলা হয়েছে ‘কিংহাও’।
Advertisement