Advertisement
সুজয় ঘোষাল : এমন একটা সময় ছিল, যখন মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর কদর ছিল সমাজে। কুমোরদের চাকা না ঘুরলে সমাজের চাকাও স্তব্ধ হয়ে যেত। কিন্তু সময় বদলে গিয়েছে। আধুনিক সভ্যতার চাকা যত ঘুরছে, কুমোর পাড়ার চাকাগুলো ধিরে ধিরে শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। প্লাস্টিক আর ধাতব জাতীয়সামগ্রীর অসম প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে মাটির সামগ্রীগুলি। আজ প্রায় অস্তাচলে যেতে বসেছে ‘কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ির বোঝায় করা কলসি হাঁড়ি’। কিন্তু আজও কোনও রকমে টিকে রয়েছে একাধিক কুমোরপাড়া।
এই রকমই এক কুমোরপাড়ার সন্ধান পাওয়া গেল বীরভূম-মুশির্দাবাদ সংযোগস্থলের উলকুন্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত রামনগর গ্রামে। রামনগরের কুমোরপাড়ায় বর্তমানে ৮–১০টি পরিবার বাস করে। এর মধ্যে কিছু পরিবার আজও মৃৎশিল্পের কাজ করে আসছে। বহু প্রজন্ম ধরে এই পাড়ায় বসবাস করে আসছে তারা। জীবন ও জীবিকার টানে একটা সময় প্রায় প্রতিটা ঘরেই মাটির তৈজসপত্র তৈরী হত। তবে সময়ের কালগ্রাসে অন্য জীবিকার সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে এদেরই বংশধরদের।
বিবর্তনের সাক্ষ্য ধরে রাখতে আজও এই পাড়াতে দেখা মেলে মাটির তৈরি মালসা, সরা, হাঁড়ি, পাতনা, ঘট, চাটু ইত্যাদি সামগ্রীর। কুমোরপাড়ার উর্মিলা পাল, কার্তিক পাল জানালেন, মাটির পাত্র তৈরী করতে উৎকৃষ্ট মানের মাটি সংগ্রহ করে তা দিয়ে মাটির পাত্রে রূপ দিতে ব্যবহার করা হয় ‘আতল’, ‘বলো’, ‘পিতনে’ ইত্যাদি কারিগরি আনুষঙ্গিক। তারপর পাত্রগুলিকে রোদে শুকিয়ে শালে পোড়ানো হয়। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় বাজারে। কেউ বা বাড়ি থেকেই পাইকারি দরে পুজোর সময় ঘট ও মালসা নিয়ে যায়। তবে বর্তমানে আগের থেকে মাটির পাত্রের চাহিদা কমেছে ক্রেতা সমাজে। তাই অনেক কুম্ভকার নিজের পুরনো পেশা ছেড়ে কৃষিকাজের সাথেও যুক্ত হচ্ছেন। কেউ বা ভিনদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বিকল্প জীবিকার সন্ধানে।
এই জনপদটি কুম্ভকার সম্প্রদায়ের তৈরী সামগ্রীগুলি আজও এক অন্যতম নির্দশন। এখানে কৌতূহলী ও উৎসুক মানুষ আজও খোঁজ করেন মৃৎশিল্পীদের।
- All Rights Reserved
Advertisement