Advertisement
সুজয় ঘোষাল : গ্রামে প্রবেশ করলেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেকটি ঘরে শোনা যাবে খটা–খট, খট–খট শব্দ। দেখতে পাওয়া যাবে তাঁতিদের সুতো থেকে তাঁতবস্ত্র তৈরির অক্লান্ত শ্রমের চিত্র। এখানে গ্রাম বলতে লাভপুর ব্লকের আবাডাঙা ও তার পার্শ্ববর্তী দাঁড়কা, বগকদর, জামনা, হাটকুলয়া, পুরাতনকুলয়া প্রভৃতি গ্রামগুলির কথা বলা হচ্ছে।
এখানে তাঁতিদের নিত্য পরিশ্রমের মধ্যেই দিন কাটে। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। আবাডাঙা গ্রামে প্রায় ১৫০ ঘর তাঁতির বসবাস। তাঁদের মধ্যে কুন্ড, গণাই, গুই, রানো-রা জাতিগতভাবে তাঁতি। তাছাড়াও গ্রামে কর্মসংস্থানের অন্য কোনও উপায় না পেয়ে বর্তমানে এই তাঁত শিল্পের কাজে আকৃষ্ট হয়ে তাঁতিদের দলে ভিড়েছে বেনে, বৈরাগী, বায়েন, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি উচ্চবর্ণের মানুষেরাও। তাই এই শিল্পে শিল্পীর কোনও অভাব নেই। অভাব শুধু অর্থের। অর্থাভাবের অন্যতম কারণ পূর্বের মতো তাঁতবস্ত্রের চাহিদা বাজারে এখন অনেকটাই কম।
এখানে অধিকাংশ তাঁতিই তাঁত বোনেন পাওয়ারল্যুমে। আবাডাঙা গ্রামের বিনয় রানো, মঙ্গল রানো এবং দাঁড়কা গ্রামের দানেশ্বর গঁড়াই ও গৌতম গণাই–এর থেকে জানা গেল, আগে হ্যান্ডল্যুমে কাপড় বুনে সারা দিনে এক বা দেড়টার মতো কাপড় তৈরি হত। এখন পাওয়ারল্যুমে সারাদিনে তৈরি হচ্ছে ৩–৪টে। কিন্তু আগে প্রত্যেক কাপড়ে ১৫০ টাকা করে থাকলেও এখন তা কমে হয়েছে ৯০ টাকা। এছাড়া বিদ্যুতের খরচ বাদ দিলে একটি পরিবারের প্রতিদিনের আয় দাঁড়ায় মেরেকেটে ২০০ টাকা।
কিছু তাঁতি হ্যান্ডল্যুমেও তাঁত বোনেন। এঁদের অবস্থা আরও করুণ। তাঁরা অধিকাংশই বয়সে প্রবীন অথবা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তাঁতবস্ত্রের বাজার সংকীর্ণতার পাশাপাশি পাওয়ারল্যুমের সাথে এক অসম প্রতিযোগিতায় তাঁদের তাঁত বুনতে হয়।
Advertisement