অনেক বেশি উজ্জ্বল, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে এলো মঙ্গল

Advertisement
দীর্ঘ ১৬ বছর পর মঙ্গল আবার একবার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই দূরত্ব সবচেয়ে কম হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। তখন পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গলের দূরত্ব হবে মাত্র ৬ কোটি ২০ লক্ষ ৭০ হাজার কিলোমিটার। ওই দিন পৃথিবীর আকাশে সূর্য ডুববে সন্ধ্যা ৫টা ৩৩ মিনিটে। আর তারপরই পূর্ব আকাশে জ্বলজ্বল করবে রক্তাভ মঙ্গল। মঙ্গলের এই উজ্জ্বল রূপ দেখা যাবে ভোর পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে উজ্জ্বল মঙ্গলের দেখা মিলবে ১৭ অক্টোবর।

অনেক-বেশি-উজ্জ্বল-পৃথিবীর-সবচেয়ে-কাছে-চলে-এলো-মঙ্গল
Image by Bruno Albino from Pixabay

রঞ্জন সরকার : পূর্ব আকাশে গত দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে রাতের দিকে উজ্জ্বল লালচে যে জ্যোতিষ্কটি দেখা যাচ্ছে, সেটি আসলে কোনও নক্ষত্র নয়। ওটি পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গল। যারা রাতের আকাশ দেখতে পছন্দ করেন, আকাশের জ্যোতিষ্কগুলিকে খুঁটিয়ে দেখতে ভালোবাসেন, হয়তো তাঁরা অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, দিন পরিবর্তনের সঙ্গে মঙ্গলেরও উজ্জ্বলতা বেড়েছে পূর্বের থেকে। দু’মাস আগের মঙ্গলের সঙ্গে তুলনা করলে বোঝা যাবে, এখনকার মঙ্গল যেন অনেক বেশি উজ্জ্বল।

ব্যাপারটি সত্যিই অবাক করেছে আকাশ প্রেমীদের। আসলে পৃথিবী সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ১২ মাস। আর মঙ্গলের ক্ষেত্রে প্রতি প্রদক্ষিণে সময় লাগে ২৬ মাস (পৃথিবীর সময় অনুযায়ী)। উপবৃত্তাকার কক্ষপথের জন্য পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গলের দূরত্বের তারতম্য ঘটে। এই হিসাবে প্রতি দুই বছর অন্তর মঙ্গল পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসে। তাই মঙ্গলকে প্রতি দুই বছর অন্তর তুলনামূলক বেশি উজ্জ্বল দেখায়।

কিন্তু এই বছর যেন অনেকটাই বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে মঙ্গলকে। কারণ দীর্ঘ ১৬ বছর পর মঙ্গল আবার একবার পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসে উপস্থিত হয়েছে। এই দূরত্ব সবচেয়ে কম হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। তখন পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গলের দূরত্ব হবে মাত্র ৬ কোটি ২০ লক্ষ ৭০ হাজার কিলোমিটার। ঠিক যেন পৃথিবী আর মঙ্গল চেয়ে থাকবে একে অপরের দিকে।

এই অবস্থায় টেলিস্কোপে চোখ রাখলে দেখা যাবে মঙ্গলের ‘আইসক্যাপ’-কে। আকাশ প্রেমীদের সবচেয়ে আকৃষ্ট করে মঙ্গলের এই বরফের টুপি। ওই দিন পৃথিবীর আকাশে সূর্য ডুববে সন্ধ্যা ৫টা ৩৩ মিনিটে। আর তারপরই পূর্ব আকাশে জ্বলজ্বল করবে রক্তাভ মঙ্গল। যাকে সহজেই চিনে নিতে পারবে পৃথিবীবাসী। মঙ্গলের এই উজ্জ্বল রূপ দেখা যাবে ভোর পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে উজ্জ্বল মঙ্গলের দেখা মিলবে ১৭ অক্টোবর। ওই দিন পৃথিবীর আকাশ হবে পূর্ণ অমাবস্যা। চাঁদের মৃদু উজ্জ্বল আলোর ছিটেফোঁটাও কোথাও থাকবে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার আকাশে জ্বলজ্বল করবে একমাত্র রক্তিম মঙ্গল।

মঙ্গল বরাবরই পৃথিবীবাসীর কাছে রহস্যময় একটি গ্রহ। গ্রীক পুরাণে যুদ্ধের দেবতার নাম হয়েছে ‘মার্স’, হয়তো মঙ্গলের রক্তিম রূপের জন্য। এক সময়ে মঙ্গলে এলিয়েনদের বসতি রয়েছে, এমন ধারণাও করতেন অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী। কিন্তু এলিয়েন থাকার প্রত্যক্ষ কোনও প্রমাণ আজও পাওয়া যায়নি। তাই বলে মঙ্গলকে নিয়ে গবেষণা থামিয়ে রাখেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বহির্বিশ্বে মানুষের বসতি স্থাপন করার অনেক বড়ো ভরসা আজও এই মঙ্গল। ধীরে ধীরে সেখানে আবিষ্কার হয়েছে পাহাড়, পর্বত, হ্রদ, সমুদ্র, বরফ স্তর। এমনকি বছর কয়েক আগে জলের প্রমাণও মিলেছে।

আগামীতে মঙ্গলের বুকে যান নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। যদিও ২০৩০-এর পর নাসা পরিকল্পনা করছে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর। সেই মঙ্গল যখন এত কাছে চলে এল, তাকে চাক্ষুষ করার উৎসাহ তো চোখে পড়ার মতোই হবে।

Advertisement
Previous articleআন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে নারীদের গুরুত্ব বোঝালো ‘উপহার’
Next article‘সার্বজনীন দুর্গা পুজো’-র ইতিহাস কিন্তু খুব বেশি পুরনো নয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here